ফ্রিল্যান্সিং, কর্মক্ষেত্রের এক সম্ভাবনার নাম!

ফ্রিল্যান্সিং, কর্মক্ষেত্রের এক সম্ভাবনার নাম!-01

বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেখানে চাকরির বাজার বেশ নাজুক অবস্থায় আছে, যেখানে ৪৯% শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার, পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র নেই বা যৎসামান্য যা আছে সেখানকার পারিশ্রমিকের নাজুক অবস্থায় এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী আশাহত বা হতাশাগ্রস্থ হয়ে যায়। এসকল ক্ষেত্রে বিকল্প পেশা হিসেবে সম্মানজনক অবস্থায় আছে ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশা, বা আরও বিস্তরভাবে বলতে গেলে অনলাইন প্রফেশন। আর এসকল অনলাইন প্রফেশন গুলোর মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং একটি।

ফ্রিল্যান্সিং খাতে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দক্ষ পেশাদারদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে শত শত কোটি টাকার। এক সমীক্ষার মতে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সার আছে ৫ লক্ষের অধিক।

ফ্রিল্যান্সিং যেমন সম্ভাবনার , তেমনি এ নিয়ে আছে প্রচুর ভুল ধারণা ও প্রতারণা। আর এই ভুল ধারণাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদ। আজ এ সব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হবে এই আর্টিকেলে।

ফ্রিল্যান্সিং, যেখানে কোন প্রতিষ্ঠানে পার্মানেন্ট চুক্তিবদ্ধ না হয়ে শুধুমাত্র প্রজেক্ট বেসিসে কাজ করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং করে আসছে মানুষ শত বছর ধরে,বলা যায় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই। এখানে সজ্ঞানুযায়ী একজন রিক্সাওয়ালাও ফ্রিল্যান্সার, কারণ সে অন্যের রিক্সা চালায়, ইচ্ছা হলে প্যাসেঞ্জার নেয়, নাহলে নেয় না। তার ফ্রিডম আছে। ইদানিং ফটোগ্রাফাররাও ফ্রিল্যান্সার, কারণ তারা কোথাও ফটোগ্রাফার হিসাবে চাকরি না করে বরং অনুষ্ঠান বেসিসে শুট করে আর পারিশ্রমিক নেয়। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং কোন পারমানেন্ট কাজ নয়, বরং দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খন্ডকালীন কোনো কাজ মাত্র।

অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মানে হল, যে কাজ ক্লায়েন্ট অনলাইনের মাধ্যমে আপনাকে দিবে, আপনি সে কাজে চুক্তিবদ্ধ হবেন, অতঃপর নিজের দক্ষতা দিয়ে কাজটা করবেন, আর সেটা অনলাইনের মাধ্যমেই ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করবেন, আর ক্লায়েন্ট অনলাইনের মাধ্যমেই আপনাকে পেমেন্ট করবে। এখানে অনলাইনে কোনো পারমানেন্ট কাজ করেননি, কাজে দক্ষতা দিয়েই খণ্ডকালীন কোনো কাজ করেছেন; শুধু মাধ্যমটা অনলাইন, যোগাযোগের মাধ্যম অর্থাৎ ঘরে বসে বাহিরের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এটাকে আবার অনলাইন কাজ না বলে বরং দক্ষতার বিনিময় বলা চলে। উদাহরণ হিসেবে ফোনে কোন কাজের ডিল হলে নিশ্চয় আপনি এটাকে ফোনে আয় করা বলেন না, তেমনি এটাও অনলাইনে ইনকাম নয়, দূর থেকেই চুক্তি ভিত্তিক দক্ষতার প্রয়োগ।

এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন ফ্রিল্যান্সার, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সার, আউটসোর্সিং কি?

একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই ফ্রিল্যান্সার, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সার, আউটসোর্সিং কি।

ধরুন আপনি ভাল একাউন্টিং করেন। আমেরিকার এক ক্লায়েন্টের কোম্পানির ১ মাসের একাউন্ট অডিট করতে হবে। সে অনলাইনে একটা প্ল্যাটফর্মে অফার করল। অনেকের মত আপনি অ্যাপ্লাই করলেন। আপনি কাজটা পেলেন। একটা এমাউন্ট পেমেন্টে চুক্তিবদ্ধ হলেন। কাজটা আপনি আপনার দক্ষতা দিয়ে সম্পন্ন করলেন, অনালাইনের মাধ্যমে আপনি সেটা ডেলিভার করলেন, ক্লায়েন্ট আপনাকে পেমেন্ট অনলাইনের মাধ্যমে দিল।

শুনে খুব সহজ মনে হলেও ফ্রিল্যান্সিং সহজ কোনো কাজ নয়। আবার একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের আয় ও কম নয়।

ফ্রিল্যান্সিং লাইফ সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায়, একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সফল হওয়ার পেছনের গল্প শুনলে আপনি তাকেলিজেন্ডখেতাব দিবেন। কারণ সফলতার পেছনের গল্প আনন্দের হয়না, অনেক স্ট্রাগল থাকে। রাতের পর রাত কোন কাজ শেখা, ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখা, বই পড়া, কাজ গুলো প্র্যাক্টিস করা, ধৈর্য ধরে টাকার আশা না করে কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য মাসের পর মাস সময় দেয়া, এসব থাকে একজনের সফলতার পেছনে।

একটা উদাহরণ দেয়া যাক-

আপনি ধরুন বিবিএ পড়ছেন। ফিন্যান্স নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে ২০ বছর। ২০ বছর পড়াশোনা করা আপনি একটা জবে ফ্রেশার হিসেবে এপ্লাই করেন, যার সেলারি ১৫ হাজারের মত। অনেকবার রিজেক্ট হতে হয়, কারণ আরও শতশত লোক এপ্লাই করছে। শেষমেশ একটা জব পেলেন।

১৫ হাজারের জব করার জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করলেন দুবার না ভেবে। পড়াশোনা শেষ করে একটা লোকাল জবের জন্য প্রতিযোগীতায় নামলেন একই শহরের অন্যদের সাথে, যারা কিনা আপনার লেভেলের পড়াশোনাই করেছে।

এবার ভাবুন ফ্রিল্যান্সিং এর কথা! এমেরিকার একটা কোম্পানি তাদের একটা জব আউটসোর্স করল মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে। ১ মাসের প্রজেক্ট, ১ হাজার ডলার। এপ্লাই করল কারা? সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ওপেন, (ছোট শহর নয়), বিশ্বের টপ প্রফেশনালরা এপ্লাই করল, আপনিও করলেন। তার মানে? এবার আপনার প্রতিযোগীতার লেভেল কোথায়?

এবার ভাবুন, এই লেভেলে প্রতিযোগিতার জন্য আপনি শুধু ২ মাসের কোর্স করেই দক্ষ হতে পারবেন? অবাস্তব নয়?

হ্যাঁ এটা সত্যি যে ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ টাকা আয় করা যায়, সার্ভেতে দেখা যায়, এ দেশে ২০% এর বেশি ফ্রিল্যান্সার মাসে ২ লাখের উপর আয় করে। কিন্তু তারা ১/২ মাসে কোর্স করে এত দূর আসেনি। তারা অন্তত কয়েক মাস সময় নিয়ে টাকা আয়ের কথা না ভেবে শেখার উপর জোর দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়েছিল!

যেখানে ১৫ হাজার টাকার জবের জন্য ২০ বছর পড়াশোনা করতে হয়, মাসে কয়েক লক্ষ আয় করতে, বিশ্বের টপলেভেল প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে কিছুটা অতিরিক্ত টাইম, ডেডিকেশন সময় দিবেন না?

এখন বলি কারা যোগ্য এই পেশার জন্য। কাদের জন্য এই মুক্তপেশা?

  •  যাদের অতিরিক্ত লোভ নেই।
  •  যারা কাজ শেখার ধৈর্য রাখে।
  •  যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার মত কমিউনিকেশন জানে।
  •  যারা শর্টকাটে টাকা আয় করতে চায় না।
  •  যাদের জীবনে কিছু করার প্রবল ইচ্ছে আছে।
  •  যারা সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়।
  •  যাদের শেখার প্রবণতা আছে।

এখন এসকল বিষয় গুলো মেনে নেওয়ার পর ফ্রিল্যান্স শিখুন অতঃপর বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ঐ ফিল্ড গুলোর এখন পোস্ট করা জব গুলো ঘেঁটে দেখুন, বুঝার চেষ্টা করুন এ ধরণের কাজে কি কি স্কিল লাগে ঠিক করার পর এবার চেষ্টা করুন কোথা থেকে শেখা যায়, অনলাইনেই শেখা যায় ধৈর্য থাকলে। এদেশে প্রথম সারির ফ্রিল্যান্সাররা নিজে নিজেই শিখে সফল। কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন এই সময়ে এসে, স্কিল্ড হওয়ার পর পরামর্শ নিন কিভাবে ফিল্ডে নামা যায়। প্রথমেইভাই, ইনকাম করার সহজ পথ বলেনবলে কাউকে ইরিটেট করবেন না। চেষ্টা করতে থাকেন, ফেইল করলে ভুল গুলো শুধরে আবার ট্রাই করেন। যে কাজে আপনাকে এক্সেপ্ট করেনি, সে কাজ নিজেই করুন, সেম্পল প্রজেক্ট হিসেবে প্র্যাক্টিসও হবে, পোর্টফোলিও হবে। ধৈর্য ধরে নিজেকে আরও স্কিল্ড বানানোর জন্যে নতুন নতুন কিছু স্টাডি করুন।

গুরুত্বপূর্ণঃ ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে গুণটা দরকার, তা হল নিজ থেকে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা, কাউকে জিজ্ঞাসা করার আগে নিজে সময় দিয়ে মাথা খাটিয়ে নেট ঘেঁটে শিখে নেয়ার চেষ্টা। কারণ যে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবে, অবশ্যই সে নিজে অনেক ব্যস্ত, তাকে ছোট খাটো সব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তাকে বিরক্ত করা ছাড়া কোন কাজ হবেনা। কিন্তু আপনি যদি নেট ঘেঁটে কিছু শেখারজানার দক্ষতা রাখেন, আপনি যে কোন ফিল্ড নিয়ে কাজ শুরু করে নিমিষেই সফল হতে পারবেন। 

অনেকেই প্রশ্ন করেন ফ্রিল্যান্সিং শেখার পর কোথায় কাজ করবো বা এর ফিল্ড গুলো কি বা কোথায়?

নিচে কয়েকটি টপ ফিল্ড এর নাম দেওয়া হলো যেখানে কাজ করার জন্য হাজার হাজার মার্কেট প্লেস আছে।

1. Freelancer.com

https://www.freelancer.com/hire/allskills

  •  Data Entry
  •  Logo Design
  •  Graphic Design
  •  Website Design
  •  Mobile Phone
  •  Translation
  •  Software Development
  •  HTML
  •  PHP
  •  Internet Marketing
  •  WordPress
  •  Articles
  •  SEO
  •  CSS
  •  Photoshop
  •  Software Architecture
  •  Excel
  •  Android

2. Upwork

https://www.upwork.com

  • Android Developers
  • AngularJS Developers
  • Bookkeepers
  • C# Developers
  • Content Writers
  • Copywriters
  • Customer Service Representatives
  • Data Entry Specialists
  • Email Marketing Consultants
  • Excel Experts
  • Facebook Marketers
  • Graphic Designers
  • iOS Developers
  • JavaScript Developers
  • jQuery Developers
  • Mobile App Developers
  • Objective-C Developers
  • PHP Developers
  • Python Developers
  • Sales Consultants
  • SEO Experts
  • Social Media Consultants
  • Swift Developers
  • Technical Writers
  • UI Designers
  • UX Designers
  • Virtual Assistants
  • Web Designers
  • WordPress Developers
  • Writers

3fiverr.com

https://www.fiverr.com

  • Data Entry
  • Logo Design
  • Graphic Design
  •  Website Design
  • Mobile Phone
  • Translation
  • Software Development
  • HTML
  • PHP
  • Digital Marketing
  • Internet Marketing
  • WordPress
  • Articles
  • SEO
  • CSS
  • Photoshop
  • Software Architecture
  • Excel

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *